মঙ্গলবার ১৪ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩১ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম

উঠতি বয়সীদের বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে

এনা অনলাইন :   বৃহস্পতিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ 12703
উঠতি বয়সীদের বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে

দেশে উঠতি বয়সীদের মধ্যে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। যার বিদেশে লেখাপড়া করার মতো সাধ্য আছে, পরিবার পড়ালেখার পেছনে ইনভেস্টমেন্ট করতে পারবে, তারা যেমন যেতে চাইছেন আবার যাদের রেজাল্ট তেমন ভালো নয়, তারাও বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। পথঘাট খুঁজছেন ও উপায় বের করার চেষ্টা করছেন, কীভাবে বিদেশ যাবেন। ঘরে ঘরে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এ কারণে অনেকেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় আসছেন। সেখানে বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। বিদেশে পড়ালেখার জন্য যেসব পরীক্ষা দেওয়া প্রয়োজন, সেগুলো দিচ্ছেন। পরীক্ষা দেওয়ার পর ভালো ফলাফল করে বিদেশে আবেদন করছেন, সফল হয়ে বিদেশে পড়তে চলে যাচ্ছেন। যারা সফলভাবে লেখাপড়া করার জন্য যেতে পারছেন, তাদের কথা ভিন্ন। কিন্তু যারা পরীক্ষায় তেমন ভালো জিপিএ পাচ্ছেন না আর ইংলিশ টেস্টেও ভালো ফল করতে পারছেন না, তাদের জন্য বিদেশে পড়তে যাওয়া কঠিন। তার পরও হাল ছাড়ছেন না তারা। চেষ্টা করে যাচ্ছেন। লক্ষ্য বিদেশে যাবেনই বা যেতেই হবে।

আবার এমনও দেখা যাচ্ছে, ইংলিশ মিডিয়ামে না পড়ার কারণে ইংরেজিতে ততটা ভালো না। আবার জিপিএ তত ভালো না। কিন্তু স্বপ্ন একটাই বিদেশে যাবেন। কেউবা যেতে চান পড়তে, কেউবা যেতে চান কাজের সন্ধানে। উচ্চশিক্ষার জন্য যারা যান, তাদের মধ্যে বাংলা মিডিয়াম থেকে পড়া স্টুডেন্টরাও অনেকেই ভালো করছেন। সফল হচ্ছেন। বিদেশে পড়তে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশ প্রাধান্য পাচ্ছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সিঙ্গাপুর, চীন, মালয়েশিয়া, ভারতসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ রয়েছে। অনেকেই ভালো স্কলারশিপ নিয়ে দেশ ছাড়ছেন। যারা ভালো স্কলারশিপ নিয়ে দেশ ছাড়ছেন, তারা বিদেশে আসার পরও ভালো রেজাল্ট করে বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপ পাচ্ছেন। ২০ ঘণ্টা ক্যাম্পাসে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন। জুনিয়র ইয়ারে ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ পাচ্ছেন। এরপর আবার ব্যাচেলর পাস করার পর চাকরিও পেয়ে যাচ্ছেন। ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের লেখাপড়া শেষ করার পর যারা সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে ও স্টেম প্রোগ্রামে লেখাপড়া করেন, তারা ভালো সুযোগ পান। তবে যারা জিপিএ ভালো করতে পারেন না, তাদের জন্য ভালো চাকরি পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

একাধিক সূত্রে কথা বলে জানা গেছে, দেশ থেকে যারা যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে আসেন, তাদের বেশির ভাগই লেখাপড়া করছেন। এর বিপরীত চিত্রও রয়েছে। কারণ তারা বিদেশে আসবেন এমন স্বপ্নে বিভোর হয়ে আসেন। এক সেমিস্টারের অর্থ দেওয়ার পর দেখা যায়, ভালো রেজাল্ট করতে না পারার কারণে স্কলারশিপ লাভ করতে পারেন না। এখানে জীবনযাপন ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে অনেকেই কাজ খোঁজে। সবার পক্ষে ক্যাম্পাসে জব জোগাড় করা সম্ভব হয় না। এ কারণে অনেকেই ক্যাম্পাসের বাইরে চাকরি খোঁজেন। কেউ কেউ ক্যাশেও কাজ করেন। পড়ালেখার মাঝখানে কাজ করার কারণে দেখা যায় জীবনসংগ্রামে টিকে থাকতে গিয়ে লেখাপড়ায় শেষ পর্যন্ত থাকতে পারেন না। ড্রপ আউট হওয়ার নজিরও রয়েছে। অনেক অভিভাবক সেটি দেশে জানতেও পারেন না।

দেশে এখন কেবল যে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা বিদেশে যেতে চান, তেমন নয়। নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তানেরাও বিদেশ পড়তে যেতে চান। বিশেষ করে, পরিবারের অভিভাবকেরাই মনে করেন, ছেলেমেয়েকে বিদেশে পাঠাবেন। এ জন্য বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কাজ করেন, এমন মাও স্বপ্ন দেখেন তার সন্তান বিদেশে যাবে, লেখাপড়া করবে এবং লেখাপড়া শেষ করে তাকেও বিদেশে নিয়ে যাবে। তারা দেশে আর থাকতে চাইছেন না।

একাধিক সূত্র বলছে, আসলে মানুষের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্নপূরণের জন্য প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। এর পাশাপাশি নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তানেরা স্কুলে পড়াকালীন থেকেই স্বপ্ন দেখছে বিদেশে পড়তে যাবে। সে যতটা না নিজে নিজে স্বপ্ন দেখছে তার চেয়ে বেশি বাবা-মা সন্তানকে বিদেশে পাঠাতে চান। তারা স্বপ্ন্ন দেখছেন, একদিন তার সন্তান বিদেশে গিয়ে লেখাপড়া করে তাকেও বিদেশে নিয়ে যাবে।

শিক্ষার জন্য বিদেশ যাওয়ার প্রবণতার পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষেরা দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাতে চাইছেন। যে যেভাবে পারছেন, বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। যে কেউ বিদেশে যেতে পারেন, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু বেশি সংখ্যক বা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সংখ্যক যখন বিদেশে যেতে চান আর ছোট ছোট স্কুলপড়ুয়া সন্তানদেরও বিদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন, তখন বিষয়টি ভাবার অবকাশ রাখে।

এ জন্য অনেকে জমিজমা বিক্রি করেও যাচ্ছেন। আমেরিকায় আসছেন অনেকেই বর্ডার পার হয়ে। অনিশ্চিত জীবন। আসার পথে মৃত্যু হতে পারে, এমন ঝুঁকি আছে জানার পরও পরিবার-পরিজন ছেড়ে অল্পবয়সী ছেলে থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের মানুষেরা আসছেন। আবার সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আসা ছাড়াও অনেকেই দেশ থেকে ভিসা নিয়ে আসছেন।

বিদেশে আসার পর অ্যাসাইলাম আবেদন করলে তা গৃহীত হবে কি না, তা না জেনেই আবেদন করছেন। এমনও একাধিক পরিবারের সন্ধান পাওয়া গেছে, যারা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে পুরো পরিবার নিয়ে দেশ ছেড়েছেন। এখানে এসে বৈধভাবে থাকতে পারবেন কি না জানেন না, তার পরও আসছেন। বাসা ভাড়া নিচ্ছেন দুই থেকে তিন হাজার ডলার দিয়ে। মাসে মাসে চার-পাঁচ হাজার ডলার খরচ করছেন। অথচ আয় নেই। কয়েক মাস হাজার হাজার ডলার খরচ করার পর হিসাব কষছেন কত অর্থ খরচ হয়ে যাচ্ছে। তখন কুলিয়ে উঠতে না পেরে বাসায় সাবলেট দিচ্ছেন।

কেন এমনভাবে এসেছেন ও এখানে থাকতে চাইছেন জানতে চাইলে অধিকাংশ ব্যক্তির উত্তর একটাই- কী করব দেশে থেকে। দেশে থেকে লাভ নেই। বিদেশেই ভালো থাকব। কথা তাদের একটাইÑনিজের ও পরিবারের ভবিষ্যতের জন্যই চলে এসেছেন। অথচ তারা বিপুল পরিমাণ অর্থ এখানে ব্যয় করছেন থাকার জন্য। নথিপত্রহীনদের কাজ পাওয়া সহজ নয়। এটা জানার পরও চেষ্টা করেন কাজের। অনেকেই ক্যাশে কাজ করার সুযোগও পেয়ে যান। সে ক্ষেত্রে তাদের বেতন হয় অন্য সবার চেয়ে কম। তারা বেতনের দিক থেকে বঞ্চিত হন। যারা আইনি প্রক্রিয়ায় এগিয়ে গিয়ে সফল হন, তারা বৈধভাবে থাকার সুযোগ পান, তাদের ভাগ্যের চাকা দ্রুতই ঘোরে। কিন্তু অনেকেই আছেন, সব চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। নিদারুণ কষ্টে দিন কাটান। অমানবিক পরিশ্রম করেন। এখানে আইনি প্রক্রিয়ায় সফল হতে না পেরে শেষমেশ দেশে ফেরত যান, এমন নজিরও রয়েছে। অনেকেই আছেন যুগের পর যুগ অপেক্ষা করেও কোনোভাবেই সফল হতে পারেন না। তখন একরাশ দুঃখই সাথি হয়।

দেশে উচ্চপদে আসীন আছেন এমন বাবা-মায়েরাও চাইছেন তাদেন স্কুলপড়ুয়া সন্তানকে বিদেশে পাঠাতে। এর কারণ জানতে চাইলে একাধিক অভিভাবকই বলেছেন, তারা চান তাদেন সন্তানেরা বিদেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে লেখাপড়া করুক। রাজনৈতিক কোনো অস্থিরতা যাতে তাদেরকে পিছিয়ে দিতে না পারে। তবে সবারই প্রত্যাশা বিদেশে যাওয়ার মধ্য দিয়ে স্বপ্নপূরণ এবং একটি সচ্ছল ও শান্তিপূর্ণ জীবনের হাতছানি।

Facebook Comments Box

Comments

comments

Posted ৭:২৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

America News Agency (ANA) |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

 

President/Editor-in-chief :

Sayeed-Ur-Rabb

 

Corporate Headquarter :

 44-70 21st.# 3O1, LIC. New York-11101. USA, Phone : +6463215067.

Dhaka Office :

70/B, Green Road, 1st Floor, Panthapath, Dhaka-1205, Phone : + 88-02-9665090.

E-mail : americanewsagency@gmail.com

Copyright © 2019-2024Inc. America News Agency (ANA), All rights reserved.ESTD-1997